এবিএনএ : সরকার চারদিকে ব্যর্থ উল্লেখ করে এ ব্যর্থতা ঢাকতেই সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানিয়ে মামলা প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সুসংগঠিত কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুঁশিয়ারি দেন রিজভী।
শনিবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী।
শফিক রেহমানের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে সাদা পোষাকের গোয়েন্দা পুলিশ বৈশাখী টেলিভিশনের লোক পরিচয় দিয়ে শফিক রেহমানের ইস্কাটনের বাসায় প্রবেশ করে। এরপর ভাবী (শফিক রেহমানের স্ত্রী তালেহা রেহমান) তাদেরকে বসতে বলে চা-নাস্তা খাওয়ান। পরে শফিক রেহমানের সাথে কথা বলতে বলতে তারা বাইরে বের হয়ে আসেন। এক পর্যায়ে তারা শফিক রেহমানকে গাড়িতে উঠতে বলেন। শফিক রেহমান এর কারণ জানতে চাইলে তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দেয়।’
রিজভী বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, গ্রেপ্তারের পর সাংবাদিক শফিক রেহমানকে মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এছাড়া পল্টন থানার পুরানো একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তাকে।’
সাংবাদিক শফিক রেহমানের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘শফিক রেহমান একজন জ্ঞানতাপস মানুষ। তাকে আমরা একটি ইনস্টিটিউশন বলি। এছাড়া শফিক রেহমানের বাবা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) বাবার (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) শিক্ষক ছিলেন। এ ধরনের বিশিষ্ট গুণীজনদের যদি এই পরিণতি হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন দেখা দেয়-কে চালাচ্ছে এই দেশ? কোন শকুনিরা দেশটাকে ছিঁড়ে-কুড়ে টুকরো টুকরো করছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী এর আগে একজন বরেণ্য আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, মুই কার খালু রে, আমার বেগুন আমি রাঁধব, যত খুশি লবণ দেব। এই যে কথাবার্তা এর মধ্য দিয়ে উনি (শেখ হাসিনা), উনার পরিবার এবং দল ছাড়া এ দেশে কারো কোনো সম্মান নেই, কথা বলার অধিকার নেই, বেঁচে থাকারও অধিকার নেই।’
আসলে ভোটারবিহীন এই অবৈধ সরকার বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করেছে।দেশকে চরম বিপযয়কর অবস্থার দিকে নিয়ে গেছে। দুর্বল, হৃদয়হীন, দাম্ভিক প্রধানমন্ত্রী এখন অকপট সত্যভাষী গুণীজনদের নির্মলের মহাপরিকল্পনা করার নির্দেশ দিয়েছে। যার নির্মম শিকার হলেন সাংবাদিক শফিক রেহমান।
শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকারের অনাচার, ব্যর্থতা ও কুপমণ্ডুকতার বিরুদ্ধে অবিচল নির্ভয়ে শাণিতভাবে লিখে যাওয়ার কারণে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার হুকুমবাজ ও বাধ্য করার নীতি শফিক রেহমানের ওপর প্রয়োগ করা যায় না। কারণ, তিনি ধ্রুব তারার মতো অবিচল, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে। তাকে গ্রেপ্তার সরকারের চৈতন্যলোপের শামিল।’
রিজভী বলেন, ‘সরকার চারদিক থেকে ব্যর্থ। চারদিকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। কোথাও কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নেই। মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। ভয়ঙ্কর এই ব্যর্থতা ঢাকতেই সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের (জিসিসি) নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে এই সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একাধিক মামলা দায়ের করে। মুক্তি পাওয়ার পর শুক্রবার রাতে তাকে ফের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
মেয়র মান্নানকে গ্রেপ্তার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই সরকার ভোটারবিহীন ও অনির্বাচিত হওয়ায় তারা নির্বাচিত কোনো মানুষকে পছন্দ করেন না। সেজন্য অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রিজভী অবিলম্বে সাংবাদিক শফিক রেহমান ও অধ্যাপক আব্দুল মান্নানের মামলা প্রত্যাহার করে তাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় সুসংগঠিত কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।